ছাত্র সংবাদ : ২৮ অক্টোবর ২০০৬। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য জানতে চাই?
সোহাইল আহমদ : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, এটি গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। আওয়ামী হায়েনারা যখনই ক্ষমতা পেয়েছে, তখনই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, নিরীহ মানুষের ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করেছে। ইতিহাস সাক্ষী জালেমরা কখনো রেহাই পায়নি, বাংলার জমিনেও পর্যায়ক্রমে সকল অপরাধের সুষ্ঠু বিচার হবে ইনশাআল্লাহ!
ছাত্র সংবাদ : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর ভূমিকাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।
সোহাইল আহমদ : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে এক কথায় নব্য জাহেলিয়াত বলা যায়। আর এই পরিস্থিতি সূচনা হয়েছে সেই বর্বরতার মধ্য দিয়ে। লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতার মসনদে এসেছিল ভারতের তাঁবেদার আওয়ামী সরকার। যাদের হিং¯্র নখরে প্রতিনিয়ত ঝরছে সাধারণ মানুষের রক্ত।
ছাত্র সংবাদ : ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে জাতিকে আর প্রত্যক্ষ করতে না হয় সে জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
সোহাইল আহমদ : ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সকল অপরাধীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে এ ধরনের ঘটনার স্থায়ী প্রতিরোধ।
ছাত্র সংবাদ : নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা কি মানবাধিকারের লংঘন নয়? এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
সোহাইল আহমদ : নিঃসন্দেহে এটা অন্যায়। এতে চরম মানবাধিকার লংঘন হয়েছে। দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে সরকার অপরাধীদের রক্ষকের ভূমিকা পালন করছে এবং এর মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের উৎসাহ প্রদান ও মজলুমদের ন্যূনতম অধিকারকেও খর্ব করা হয়েছে।
ছাত্র সংবাদ : স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টিকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
সোহাইল আহমদ : স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা ছিলেন, যারা শত্রুপক্ষের হয়ে দেশের মানুষের মুক্তি আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন, অবশ্যই তাদেরকে প্রাপ্য সাজা ভোগ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রাণের দাবি। তাই বলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে প্রহসনের বিচারে নির্দোষ মানুষকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা কোনভাবেই কাম্য নয়।
ছাত্র সংবাদ : আওয়ামী দুঃশাসনের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য সকল ছাত্রসংগঠনের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
সোহাইল আহমদ : এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে উঠেছে ছাত্রসমাজের হাতেই। একটি চমৎকার ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর। বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ মানুষের সকল মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে ও নাস্তিক্যবাদী আওয়ামীদের কবল থেকে দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সকল ছাত্রসংগঠনকে।
ছাত্র সংবাদ : সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য ছাত্র ও যুবসমাজের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী?
সোহাইল আহমদ : প্রতি বছর শিক্ষার হার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, কিন্তু শিক্ষার মান গিয়ে ঠেকেছে শূন্যের কোটায়! আদর্শ-নৈতিকতা ও বাস্তবতা বিবর্জিত প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কিছু অথর্ব ও বেকার তৈরি ছাড়া কোন কাজে আসছে না আমাদের। সিলেবাসের সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত ছিল। সর্বস্তরের ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আমার আন্তরিক প্রত্যাশা হলো- আপনারা জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি নিজেদের চারিত্রিক উৎকর্ষতার দিকে অবশ্যই নজর রাখবেন এবং সামর্থ্যরে সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে, স্বীয় অবস্থান থেকে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের লক্ষ্যে কাজ করে যান। এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্বও। আজকের ছাত্র ও যুবকদের হাতে থাকবে বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্ব। মনে রাখবেন, সময় সর্বদা সমান যায় না, শীঘ্রই সকল আঁধার কেটে যাবে, বাংলার পূর্বাকাশে উদিত হবে তাওহিদের স্বর্ণালি সূর্য।
লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস