ছাত্র সংবাদ : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের পৈশাচিক ঘটনার ইতিহাসে আরেকটি সংযোজন। মানুষকে হত্যা করে লাশের ওপর উল্লাস নৃত্য যারা করেছে, তাদেরকে আর যাই হোক মানুষ বলা যায় না। তাদেরকে নরপশু বললেও কম বলা হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে দেশের জনগণ উদ্বিগ্ন। দিন দিন এই উদ্বেগ বেড়ে চলেছে।
ছাত্র সংবাদ : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্যে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর ভূমিকাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : সেদিনকার সেই লোমহর্ষক ঘটনায় বিবেকমান মানুষ বিস্ময়ে হত বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। কেননা মানুষ হয়ে অন্য মানুষের ওপর এ ধরনের নারকীয় ঘটনা সংঘটিত করার মনোবৃত্তি যাদের, তারা পশুর চেয়ে অধম। ফলে দেশ আজ দুষ্কৃতকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আশঙ্কাজনক হারে অপহরণ-খুন-গুম, হাইজ্যাক, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, নারী ও শিশু পাচারের মতো কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় দেশের জনগণ উদ্বিগ ও উৎকণ্ঠিত। হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও উত্ত্যক্ত হওয়ার ভয়ে সকলের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজের আনাচে কানাচে, এমনকি গৃহের অভ্যন্তরে অপহরণ-খুন-গুমের অসংখ্য ঘটনা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটিয়ে অনায়াসে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
ছাত্র সংবাদ : ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা যাতে জাতিকে আর প্রত্যক্ষ করতে না হয় সে জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত?
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ মানবতাবিরোধী কোন কাজকেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়।
ছাত্র সংবাদ : নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলা সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা কি মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়? এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : এ ধরনের বর্বরোািচত হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শনের শামিল। নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আনীত মামলা প্রত্যাহারে দুষ্কৃতকারীরা অপরাধ সংঘটিত করার ক্ষেত্রে উৎসাহবোধ করছে।
ছাত্র সংবাদ : স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টিকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বিভেদে সৃষ্ট রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জাতীয় ঐক্য, উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে এবং দেশ আজ প্রতিহিংসার অনলে নিক্ষিপ্ত। দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুশীলনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমানাকূল ময়দান তৈরি করা অত্যাবশ্যক। বিরোধী মত ও পথের অনুসারী রাজনেতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে লাল ঘোড়া ধাবড়িয়ে দেশের রাজনীতিকে স্থিতিশীল রাখার চিন্তা-ভাবনা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার অলীক স্বপ্ন কোন দিনই সফল হবে না। রাষ্ট্র শাসনে সকল রাজনেতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই কেবল দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবেশ সৃষ্টি এবং দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি টেকসই হতে পারে। দেশ গঠনের কর্মসূচিতে সকল দল ও মতের মানষেরই সম্পৃক্ত থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রস্তুতি গ্রহণ এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুশীলনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমানাকূল ময়দান তৈরি অত্যাবশ্যক। কেননা দেশের টেকসই উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির ধারা প্রতিষ্ঠায় সকল মত ও পথের অনুসারী রাজনেতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাষ্ট্র শাসনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার অনুরূপ করে গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই কেবল উন্নতি ও অগ্রগতি টেকসই হতে পারে। দেশ গঠনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের যাত্রা অবারিত করার ক্ষেত্রে সকল দল ও মতের মানষেরই অনুগত থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করা অপরিহার্য। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। তাই দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুশীলনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমানাকূল ময়দান তৈরি করা অত্যাবশ্যক। বিরোধী মত ও পথের অনুসারী রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে লাল ঘোড়া ধাবড়িয়ে দেশের রাজনীতিকে স্থিতিশীল রাখার চিন্তা-ভাবনা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার অলীক স্বপ্ন কোন দিনই সফল হবে না। রাষ্ট্র শাসনে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই কেবল দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবেশ সৃষ্টি এবং দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি টেকসই হতে পারে। দেশ গঠনের কর্মসূচিতে সকল দল ও মতের মানষেরই সম্পৃক্ত থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব।
ছাত্র সংবাদ : আওয়ামী দুঃশাসনের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য সকল ছাত্রসংগঠনের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : দুঃশাসনের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা অতীতে সকল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছে ছাত্ররাই। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং ছাত্রদের ঐক্য এখন সময়ের অনিবার্য দাবি।
ছাত্র সংবাদ : সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য বলুন।
মুহাম্মদ ইলিয়াস আতহারী : ঘুষ, দুর্নীতি ও শোষণ এবং বঞ্চনামুক্ত একটি সত্যিকার সুখী-সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর সমাজ নির্মাণে গণজনতার আকাক্সক্ষার সাথে ইসলামের শাশ্বত নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের চেতনাকে মিশিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র ও যুবকদের দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ প্রচলিত শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা আদর্শ হিসেবে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইসলামের আদর্শ জনগণের চিন্তা জগৎকে নাড়া দিতে শুরু করেছে।
প্রবল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের পতাকা হাতে নিয়ে জনগণকে অগ্রসর হতে দেখা যাচ্ছে। তাই ইসলামী আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ