Home Article আটাশে অক্টোবরের অন্তরালে

আটাশে অক্টোবরের অন্তরালে

আন্দোলনের নামে লগি-বৈঠার তান্ডব, অন্য দলের সভা-সমাবেশে হামলা ও নেতাকর্মীকে হত্যা করে লাশের ওপর নাচানাচি আওয়ামী লীগের কলঙ্কিত ইতিহাসে আরো একটি কালো অধ্যায়ের সংযোজন। রক্তাক্ত আটাশে অক্টোবর বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা এবং ইসলামী শক্তির উত্থান ঠেকিয়ে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আগ্রাসী শক্তির ক্রীড়নক নতজানু সরকার প্রতিষ্ঠার টার্নিং পয়েন্ট। শহীদদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। শহীদের সাথীরা আরো বেশি অনুপ্রাণিত হবে এবং সমস্ত জুলুম-নিপীড়ন মোকাবিলা করে ধৈর্যের সাথে দৃঢ় পদে এগিয়ে যাবে। ছিন্ন করবে ষড়যন্ত্রের জাল। মুক্ত করবে গণতন্ত্র। কায়েম হবে ইসলামী সমাজ। শান্তি-কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশ আবার বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ইসলামী সমাজ কায়েম করেই প্রতিশোধ নেয়া হবে নির্মম হত্যাকান্ডের।

ক্ষমতার দাপটে হুকুমের আসামিসহ সকল হত্যাকারীর বিরুদ্ধে রুজু করা মামলা প্রত্যাহার করে দেশের আইনের শাসনকে অপদস্থ করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে আখেরাতের বিচার এতে ঠেকে যায়নি। সকল বিচারকের বিচারক, সকল ক্ষমতাবানের ওপরে ক্ষমতাবান আমাদের প্রভু মহান রাববুল আলামিন যেদিন বিচার করবেন সেদিন সকল হত্যাকারী উপযুক্ত প্রতিফল পাবে। সেদিন শহীদ মুজাহিদ, শহীদ মাসুম, শহীদ শিপন, শহীদ জসীম, শহীদ আরাফাত, শহীদ হাবিব, শহীদ রফিক, শহীদ নাদের, শহীদ ফয়সল, শহীদ আববাস, শহীদ রুহুল আমীন, শহীদ জাবেদ, শহীদ শাহজাহান আলীসহ দ্বীনের পথের সকল শহীদ এবং শহীদের সাথীরা পরম আনন্দ পাবে। সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছিল। আন্দোলন সংগ্রামের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আকাশ মেঘমুক্ত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থার অধীনে পরপর তিনটি সফল নির্বাচন দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিল ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ -এর নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় ২২ জানুয়ারি ২০০৭-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে গণতন্ত্র অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেত। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশ মধ্য আয়ের সম্মানজনক পজিশনে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতো। আগ্রাসী শক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার পরিবেশ তৈরি হতো। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ কায়েম করে কল্যাণময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে ইসলামী আন্দোলন আরো এক ধাপ এগিয়ে যেত।

তথাকথিত বামপন্থীদের তো জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগ হাতেগোনা সীমিতসংখ্যক সিট নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনেই বাধ্য হতো। গণতান্ত্রিক ধারা নস্যাৎ করে দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তিকে ঠেকানোর লক্ষ্যেই গণবিচ্ছিন্ন তথাকথিত বামপন্থীরা আওয়ামী লীগের ওপর সওয়ার হয়েই ১৪ দলীয় আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুরসহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশে শত লোককে হত্যা, হাজারো লোককে আহত এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করে। মানবতার বিপর্যয় সাধন করে অনেক কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্রের লাঠিতন্ত্র কায়েম করে। ২৮ অক্টোবরের জঘন্য হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ধীকৃত অসাংবিধানিক সরকার কায়েমের পরিবেশ সৃষ্টি করে। যারা অবৈধভাবে ২টি বছর জাতির ঘাড়ে চেপে ছিল জগদ্দল পাথরের মতো। বামপন্থী ও আওয়ামী লীগ আইনজীবী-বুদ্ধিজীবী-সুশীলরা মিলে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে এবং একের পর এক অযৌক্তিক দাবি পেশ করে অসাংবিধানিক সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধি করে সাজানো নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে। ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যেভাবে ইরাক-আফগানিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বে দুর্দিন নেমে আসে তেমনি ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকারের নামে অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা ধ্বংস করা হয়। ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকার দেশ ও জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে যাদের সহযোগিতার ক্ষমতায় এসেছে তাদের স্বার্থেই কাজ করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৮২-তে রাজশাহীতে ৪ জন তাজাপ্রাণ শিবিরকর্মী হত্যা করে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের পক্ষ থেকে ক্ষমতা দখলের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ২৮ অক্টোবর জঘন্য হত্যাকান্ডের নায়ক তথাকথিত বামপন্থী ও আওয়ামী লীগ সেই স্বৈরাচারের সাথে জোট করেই আজকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।

জনগণকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী-বামপন্থী স্বৈরাচারের জোট সরকারকে হটিয়ে দেশকে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার শপথই হোক আমাদের ২৮ অক্টোবর বার্ষিকীর মূল শপথ। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

লেখক: আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি

সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, চট্টগ্রাম মহানগরী।

SHARE