Home Article ২৮শে অক্টোবরঃ লগি-বৈঠা, গুলী-বোমার আওয়ামী পৈশাচিকতা

২৮শে অক্টোবরঃ লগি-বৈঠা, গুলী-বোমার আওয়ামী পৈশাচিকতা

এক অজানা উৎকণ্ঠায় সারাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। পবিত্র মাহে রমজানের পর ঈদ-উল ফিতরের আনন্দ উৎসবের রেশ তখনও বিদ্যমান। দেশে যে গণতান্ত্রিক সুন্দর ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় ঈদের ৩ দিন পরই জোট সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে। শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এ ঐতিহাসিক মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছে, সে সময়ই এক অজানা আশঙ্কা ভর করেছে সবার মনে। ঢাকা শহরে এক অদ্ভুত থমথমে নীরবতা, গ্রাম-গঞ্জে আটকেপড়া শহরমুখী মানুষ এক অবর্ণনীয় দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করছে টিভি এবং রেডিওর সামনে কি অবস্থা দেশের? রেওয়াজ অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক তার পরপরই পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে সৃষ্টি করা হলো এক চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। সেই পুরনো দৃশ্য ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাট ও সড়ক অবরোধ। পরদিন ২৮ অক্টোবর, সব জায়গায় থমথমে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি, টিভি চ্যানেলে যখনই কোন সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কী পরিস্থিতি তা জানার জন্য। বিকেল এবং সন্ধ্যায় প্রায় সবকটি টিভি চ্যানেলে যখন সচিত্র সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছিল কোটি কোটি মানুষের চোখ তখন স্থির। ঢাকার পল্টন মোড়ে এ কি লোমহর্ষক, হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখছে তারা? লগি, বৈঠা, কিরিচ, লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একদল উন্মত্ত মানুষ কিভাবে নির্বিচারে অত্যাচার চালাচ্ছে আরেকদল মানুষের ওপর। কিভাবে পিটিয়ে, খুঁচিয়ে আঘাতের পর আঘাতে জীবন্ত যুবকদের হত্যা করছে, হত্যার পর মৃত লাশের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাসনৃত্য করছে। পুলিশের সামনেই মুহুর্মুহু গুলি ও বোমা ফাটিয়ে শত শত বনি আদমকে আহত করছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাজপথ। উহ্! এ দৃশ্য দেখে মূর্ছা গেছেন অনেক মা-বোন, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মানবিক চেতনাসম্পন্ন প্রতিটি মানুষ। গণতান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এ কেমন ভয়ঙ্কর রূপ! সদ্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বাংলার কতিপয় মানুষের এ কেমন খোলস?

একটি ঘোষণায় রক্তাক্ত সারাদেশ

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সোনার বাংলাদেশ আজ সোনালি গণতান্ত্রিক ইতিহাসের ১৬টি বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছে। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি, জোট সরকার ও দেশবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী। দেশী-বিদেশী পত্রপত্রিকায় দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে, দাতাদেশগুলোকে সহযোগিতা করতে নিষেধ করে, দেশকে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের আস্তানা আখ্যা দিয়েও যখন তারা বাংলাদেশের দ্রুত ধাবমান এগিয়ে চলাকে থামিয়ে দিতে পারেনি, তখন তারা মেতে উঠে ঘৃণ্য ধ্বংসলীলায়।
১৮ সেপ্টেম্বর ’০৬ পল্টনের মহাসমাবেশ[১] থেকে শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন লগি-বৈঠা-লাঠি নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য। নেতাকর্মীদের বুঝতে বাকি রইল না- কী করতে হবে তাদের। সময়টিও সেভাবে বেছে নিলেন শেখ হাসিনা। সফল জোট সরকারের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রেখে যখন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের কাছে মতা হস্তান্তারের ঘোষণা দেবেন, তখনই সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে একটি অরাজক ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ।

অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতকর্মীরা লগি-বৈঠা-লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ফলে হঠাৎ করেই দেশে নেমে আসে চরম নৈরাজ্য। রাজপথ ও সভাস্থল দখলের নামে আওয়ামী লীগ আক্রমণ করে জামায়াত ও জোট নেতাকর্মীদের ওপর, শুরু হয় মুখোমুখি সংঘর্ষ। অত্যন্ত সুকৌশলে দেশকে ঠেলে দেয়া হয় অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলার দিকে, যার সবচেয়ে বড় শিকার সাধারণ জনগণ।

শুধু রাজনৈতিক ভিন্নতার কারণে জামায়াত কর্মীরা আওয়ামী লীগের বর্বোরচিত হামলার শিকার হন। অনেকের বাড়িঘর দখল করে নেয়া হয়, কারো বাড়ি আর সহায়-সম্পত্তিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়, কারো হাত কেটে নেয়া হয়, আবার কারো চোখ উপড়ে ফেলা হয়। আর এভাবেই জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের ৪ সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হন। যার মধ্যে অসংখ্য সাধারণ মানুষও রয়েছে। তৈরি হয় লাশের স্তুপ। জামায়াতে ইসলামীর ১৩ জনসহ মোট ২৬টি লাশ ঝরে পড়ে মাত্র একটি ঘোষণায়।
এই লাশের রাজনীতি আর কতকাল?
আর কয়টি লাশ পেলে ক্ষান্ত হবেন শেখ হাসিনা? এই প্রশ্ন আজ নির্যাতিত লক্ষ-কোটি মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

২৮ অক্টোবর যা ঘটেছিল পল্টনে

২৮ অক্টোবর বিকেল ৩টায় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর দিবসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সমাবেশ আহ্বান করে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে। সকাল থেকেই সমাবেশের মাইক, স্টেজ ইত্যাদির প্রস্তুতি চলছিল। সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থকদের মাঝেই আনন্দের আমেজ, ঈদের পর পরস্পর কোলাকুলি আর সফলভাবে সরকারের মেয়াদ পূর্তির আনন্দ একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কর্মীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। মঞ্চের পাশে জড়ো হয় শিল্পীরা, চলতে থাকে দেশাত্মবোধক ও ইসলামী সঙ্গীতের সুর মূর্ছনা।
বেশ কিছু দূরে পল্টন ময়দানে ছিল আওয়ামী লীগের সমাবেশ। কোন প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য জামায়াত ও শিবিরের শৃঙ্খলা বিভাগের কর্মীরা পল্টনের মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম অভিমুখী সড়কের মাথায় তৈরি করে শৃঙ্খলার বন্ধন। দুপুর ১১টার দিকে হঠাৎ করেই হাজী সেলিম এবং ডা. ইকবালের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা বাহিনী পশ্চিম দিক থেকে মিছিল নিয়ে এসে পল্টন ময়দান অভিমুখে না গিয়ে সরাসরি অতর্কিত হামলা চালায় জামায়াত ও শিবিরের কর্মীদের ওপর। তাদের মুহুর্মুহু ককটেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আচমকা এ আওয়ামী আক্রমণে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন জামায়াত নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল, শিবির নেতা মুজাহিদ, জামায়াত নেতা জসিম উদ্দিনসহ সামনের সারির বহু নেতা। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএর মেধাবী ছাত্র , শিবির নেতা মুজাহিদের ওপর হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী জঙ্গি বাহিনী। উপর্যুপরি পিটিয়ে, আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মুজাহিদের হাত, পা, নাক, মাথা গুঁড়িয়ে দিয়ে তাকে বীভৎস কায়দায় হত্যা করে। যে দৃশ্য কোনো সুস্থ মানুষ সহ্য করতে পারে না- সে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে হাজী সেলিম ও ডা. ইকবালের বাহিনী উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত লাশের উপর দাঁড়িয়ে তারা নৃত্য করতে থাকে। ঠিক একই কায়দায় পল্টন মোড়ে তারা জাপটে ধরে নিরীহ জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমানকে। সাপকে যেভাবে পিটিয়ে মারে সেভাবে নির্বিচার লাঠিপেটা করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তাকে। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে তারা মৃত মনে করে ফেলে রেখে চলে যায়। শিবিরের অফিস সম্পাদক ছাত্রনেতা রেজাউল করিমের পা ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাদের ব্রাশ ফায়ারে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জামায়াত নেতা জসিম উদ্দিন। পৈশাচিক কায়দায় তারা হত্যা করে হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন ও সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুমকে।

আওয়ামী নেতা ডা. ইকবালের সশস্ত্র বাহিনী এবং হাজী সেলিমের জঙ্গি লগি-বৈঠা বাহিনীর এ আকস্মিক আক্রমণে রক্তে ভেসে যায় পল্টন মোড়। এক পর্যায়ে জঙ্গি সন্ত্রাসী বাহিনী চেষ্টা করে জামায়াতের মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়ে মঞ্চ জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু প্রতিরোধ গড়ে তোলে জামায়াত ও শিবির কর্মীরা। ফলে আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মাথাফাটা ও হাতভাঙা রক্তাক্ত কর্মীদের জোয়ারে লালে লাল হয়ে যায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়ক। কিন্তু ৫-৬ ঘণ্টা চেষ্টা করেও তারা জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের দুর্ভেদ্য প্রতিরোধের মুখে বায়তুল মোকাররম অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারেনি। এতে তারা হয়ে ওঠে আরো হিংস্র। পাশের কস্তুরী হোটেলের গলি দিয়ে প্রবেশ করে তারা ব্যাপক ভাঙচুর ও সাধারণ মানুষের ওপর চালায় অকথ্য নির্যাতন। বিজয়নগর থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত রাস্তায় লাগানো অন্তত ২০টি মাইক তারা ভেঙে ফেলে। রাস্তার পাশের গরিব হকারদের দোকানসহ পত্রিকা স্টলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তাদের আগ্রাসী আক্রমণের মুখেও জামায়াতের সমাবেশ যথারীতি চলতে দেখে মরিয়া হয়ে ওঠে আওয়ামী নেতারা। বিকেল ৫টার সময় যখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বক্তব্য রাখছিলেন, তখন লগি-বৈঠা বাহিনী সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে জামায়াতের সমাবেশের ওপর। এ সময় তারা বিরামহীন বোমা ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। পল্টন মোড়ের গস টাওয়ারের ছাদ থেকে তারা জামায়াতের সমাবেশের ওপর উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অসংখ্য বোমা নিক্ষেপ করে। চালানো হয় অবিরাম গুলিবর্ষণ। সমাবেশের মধ্যেই ঢলে পড়ে একের পর এক শহীদের লাশ, আহতদের মর্মস্পর্শী আহাজারির মধ্য দিয়েই সমাপ্ত হয় সমাবেশ।

আওয়ামী অপরাজনীতির এখানেই শেষ নয়। তারা নিহত জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমানের লাশ নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতির অপচেষ্টা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম ভুয়া পিতা সাজিয়ে এক ব্যক্তির মাধ্যমে শহীদ হাবীবুর রহমানের লাশ ছিনতাই করতে চাইলে তা পরে ফাঁস হয়ে যায়। আহতদের ভিড়ে নিকটবর্তী ৩টি হাসপাতাল ও অসংখ্য ক্লিনিক হয়ে ওঠে কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

পল্টনের ঘটনায় যাদের আমরা হারালাম

মুজাহিদুল ইসলাম, বিবিএর ছাত্র, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, মিরপুর ১০ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি, ছাত্রশিবির।
শিবির নেতা হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন, ছাত্র, ঢাকা কলেজ।
সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুম, ছাত্র, কবি নজরুল কলেজ।
হাবীবুর রহমান, জামায়াত কর্মী।
জসিম উদ্দীন (১), জামায়াত কর্মী, লালবাগ থানা (যাকে নরপিশাচরা হত্যা করার পর গায়ের উপর উঠে উদ্যাম নৃত্য করতে থাকে)।
জসিম উদ্দীন (২), জামায়াত কর্মী।
যে দৃশ্য দেখে স্তব্ধ বিশ্ববাসী

নোবেল পুরস্কারে ভূষিত বাংলাদেশ যখন বিশ্বের দরবারে এক নতুন ইমেজে অধিষ্ঠিত ঠিক তখনই জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্যটি সেই ইমেজকে ম্লান করেছে বিশ্বের সর্বত্র। নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কোয়ারে রয়টার হেড কোয়ার্টারের ওপর স্থাপিত বিশাল টেলিভিশন স্ক্রিনে বারবার প্রদর্শিত হচ্ছিল শিবিরকর্মী মুজাহিদকে নির্মমভাবে হত্যার এই দৃশ্যটি। ঘটনার বীভৎসতা দেখে চোখ ঢেকেছেন আমেরিকানরা। আমেরিকান বাংলাদেশীরা তাদের সন্তানদের টিভি দেখতে দেননি, যাতে তারা জীবন্ত মানুষের হত্যার দৃশ্যটি না দেখে, যে দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী স্তব্ধ!
বাংলাদেশের ১৪ কোটি জনগণ লজ্জা ও ঘৃণায় বাকরুদ্ধ! সেই দৃশ্য দেখে শেখ হাসিনা কি ব্যথিত হয়েছেন? কারণ তিনিও তো একজন সন্তানের মা।

জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত পল্টনের বিভৎস ঘটনার প্রতিবেদন

“১৪ দলের কর্মীরা মুজাহিদকে তুলে পল্টন মোড়ে এনে বৈঠা ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এবং খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এক পর্যায়ে ১৪ দলের শত শত নেতাকর্মী নিহত মুজাহিদের লাশকে ঘিরে উল্লাস করে এবং বৈঠা ও লাঠি উঁচিয়ে ‘হই হই রই রই জামায়াত শিবির গেলি কই’ বলে শ্লোগান দেয়।” (দৈনিক আমার দেশ, ২৯ অক্টোবর ’০৬) “বায়তুল মুকাররম উত্তর গেটে জামায়াতের সমাবেশস্থল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তারা তিনজন শিবির কর্মীকে প্রহার ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে রাস্তায় ফেলে রাখে।” (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ অক্টোবর ’০৬)
“দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা মুক্তাঙ্গনের দিকে এসে জামায়াতের অবস্থানের দিকে গুলিবর্ষণ করতে করতে অগ্রসর হতে থাকলে গুলিবিদ্ধ হয়ে জামায়াতের দুজন নিহত হন।” (দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৯ অক্টোবর ’০৬)

“বিকেল পৌনে ৫টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে মঞ্চে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী বক্তৃতা দিতে উঠলে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগের কর্মীরা জামায়াতের সমাবেশ লক্ষ্য করে অন্তত ১২টি বোমা নিপে করে।” (প্রথম আলো, ২৯ অক্টোবর ’০৬)

“আওয়ামী লীগ কর্মীদের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ, বোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর আহতদের সারি বেড়েই চলছিল।” (দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ অক্টোবর ‘০৬)

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া

১.প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন
সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
“২৮ অক্টোবর আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি জঘন্যতম অধ্যায়। এটি কোন মতেই সমর্থন করা যায় না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে সহিংসতা বন্ধ করে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসা উচিত। তাতেই গণতন্ত্রের বিকাশ নিশ্চিত হবে।”
২. ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাক
“আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সুষ্ঠু রাজনীতি করতে ইচ্ছুক নন। সহিংসতার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসতে চান। ২৮ অক্টোবর তারই প্রমাণ। আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সক্রিয় রাখার জন্য কাজ করতে হবে।”
৩. ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক
খ্যাতনামা আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট
“এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি ঘটনা। শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে লাঠি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে আওয়ামী লীগ জীবন্ত মানুষকে লাশ বানিয়ে ছেড়েছে। এ ধরনের ঘটনা এ দেশের গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। আওয়ামী লীগকে সাংবিধানিক পন্থায় রাজনীতি করা উচিত।”
৪. ডা. কামরুল আহসান
মহাসচিব, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
“এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অত্যন্ত পৈশাচিক কায়দায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করার মধ্যযুগীয় উদাহরণ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত বিচার হওয়া দরকার। যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই।”
৫. সাদেক খান
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট
“নৈরাজ্য সৃষ্টিতে অবতীর্ণ ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে ভাঙচুর, জ্বালাও- পোড়াও, সড়ক দখল কর্মসূচি বজায় রাখার উদ্যোগ নিয়েছে … দলীয় সঙ্কীর্ণ বুদ্ধিতে বেহুঁশ বলেই রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে ১৪ দলের অভ্যন্তরে গেড়ে বসা নৈরাজ্য পিপাসুদের এসব অসার আস্ফালন।” (দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১ নভেম্বর ’০৬)
৬. ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা
সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরাম
“এটি ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। মরা লাশের ওপর উৎসব করে আওয়ামী লীগ তাদের আসল রূপ ফুটিয়ে তুলেছে।”
কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান
“জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশের মানুষকে সংযম ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করার আহবান জানান।” সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ৩০ অক্টোবর ’০৬
আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া
“আমেরিকান অ্যামবাসেডর প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস গত ক’দিন ধরে বাংলাদেশে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ধরনের সহিংসতা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক শান্তিতে নোবেল জয়ের পর গত ক’দিনের সহিংসতা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে।” সূত্র : দৈনিক যায়যায়দিন, ৩ নভেম্বর ’০৬
ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ
“ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্টিফেন ব্রিজেস গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, গত ক’দিনে বাংলাদেশে সহিংস ঘটনায় ব্রিটিশ সরকার উদ্বিগ্ন। তিনি সংঘাত বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আহবান জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পক্ষে বর্তমানে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী জার্মান দূতাবাসের এক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ১২ জনের বেশি লোকের প্রাণহানি ও অসংখ্য আহত হওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনায় সারাদেশে সহিংসতা ও সংঘাত রোধে তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রশ্নে সব দল একমত হবেন।” সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ অক্টোবর ’০৬
স্বজন হারানো শহীদ পরিবারের অভিব্যক্তি

শহীদ মুজাহিদুল ইসলামের গর্বিত মায়ের প্রতিক্রিয়া
“মহান আল্লাহ মুজাহিদের শাহাদাত কবুল করুন এবং যে উদ্দেশ্যে মুজাহিদ তার জীবন উৎসর্গ করলো আল্লাহ যেন এই জমিনে তাঁর দীন প্রতিষ্ঠা করে সে উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করে। যেসব কর্মী ভাইয়েরা ইসলামী আন্দোলনে আছেন, তাদের উপযুক্ত দীনি শিক্ষার মাধ্যমে এমনভাবে গড়ে তোলা হোক, যাতে তারা যেকোন পরিস্থিতি ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারে।” -মাহমুদা দেলোয়ার
শহীদ গোলাম কিবরিয়া শিপনের গর্বিত মায়ের প্রার্থনা
“আমি একজন রোকনপ্রার্থী এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ইউনিট সহকারী। আল্লাহর দরবারে আমার স্বপ্ন ছিল আমি শহীদের মা হবো, আল্লাহ যেন আমাকে একজন শহীদের মা হিসেবে কবুল করেন। শিপন সবসময় সত্যকে সত্য জানতো মিথ্যাকে মিথ্যা জানতো। এই দীনের আন্দোলন করতে গিয়ে সে শহীদ হয়েছে। এখন আমার বাবা শিপনের মতো যেন হাজার হাজার শিপন এই বাংলার জমিনে সৃষ্টি হয়ে শিপনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে। আমার বাবা গোলাম কিবরিয়ার সদকা যেন কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে। যাদের হাতে আমার বাবা শহীদ হয়েছে তাদের বিচার হিসেবে আল্লাহপাক তাদেরকে যেন হেদায়াত করেন। আল্লাহপাক তাদের অন্তরের খবর জানেন; যদি তাদের তকদিরে হেদায়াত না থাকে তাহলে তিনি যেন তাদের অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে দেন। আল্লাহপাক যেন সব শহীদকে কবুল করেন আমিন।” – মাহফুজা খাতুন
শহীদ সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের গর্বিত মায়ের আহবান
“আমি আমার ছেলের নাম রেখেছিলাম সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ। তার প্রিয় নানুমণি নাম দিয়েছিলেন মাসুম। সব মিলে তার নাম হয়েছিল সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুম। সাইফুল্লাহ মানে আল্লাহর তরবারি, মাসুম মানে নিষ্পাপ। আমার জীবনের আশা ছিল আমার ছেলে খালিদ বিন ওয়ালিদ হবে, উমর হবে, অসত্যকে পরাজিত করবে। সমাজের আদর্শ ছেলে হবে, নিষ্পাপ হবে। আমার ছেলে হাসান-হুসাইন এর মত হবে। আমার আর এক ছেলে শামসুল আলম মাহবুব। সব সময় দোয়া করতাম সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তারা যেন গাজী অথবা শহীদ হয়। সত্যি আমার প্রার্থনা আল্লাহপাক কবুল করেছেন। আমি মনে-প্রাণে সর্বদা আশা পোষণ করতাম মাসুম যেন ময়দানে সবার আগে থাকে। আল্লাহপাক আমার দোয়া কবুল করেছেন। আমি আমার সাইফুল্লাহর রক্তের বিনিময়ে এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক এই প্রার্থনা সব সময় করি। আমার কলিজার টুকরা শিবিরের আব্বুদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ- মাসুম যেমন করে জীবনের মায়া, পরিবারের মায়াকে দূরে ঠেলে দিয়ে বাতিলকে পরাজিত করার জন্য বীরের বেশে লড়েছে, ঠিক সেইভাবে মাসুমের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো তারা যেন বীরের বেশে সমাপ্ত করে। বাতিলের বৈঠা ও লগির ভয়ে তারা যেন কাপুরুষের মতো পিছু হটে না যায়। এ রকম সাহসী শিবির যদি সবাই হতে পারে তাহলেই দীন কায়েম দ্রুত সম্ভব হবে। আল্লাহপাক সবাইকে কবুল করে নিন- আমীন।”
শহীদ জসীম উদ্দিনের গর্বিত পিতা (লালবাগ)
“শহীদ জসীম উদ্দিনকে যারা নির্মমভাবে শহীদ করেছে আমি ঐ খুনিদের বিচার চাই।” – আঃ রশিদ খান
শহীদ জসিম উদ্দিনের ছোট ভাই (জুরাইন)
“আমি মোঃ শামছুজ্জামান। আমি বাংলাদেশ সরকার, মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন করছি যে, সেদিন যারা আমার বড় ভাই জসিম উদ্দিনকে নির্মমভাবে গুলি করে শহীদ করেছে তাদের যেন দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আর যদি শহীদের হত্যাকারীদের বিচার দুনিয়াতে না হয় আল্লাহ যেন পরকালে এর বিচার করেন।” – এস. জামান
শহীদ হাবিবুর রহমানের স্ত্রীর অনুভূতি
“আমার স্বামী একজন জামায়াতের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন। অভাব অনটনের মধ্যেও সংগঠনের কোন প্রোগ্রামের ডাক এলে- ঘরে কিছু থাক বা না থাক চলে যেতেন। জামায়াত ছাড়া আর অন্য কিছুই বুঝতেন না। আমার অসুখ হয়েছিল। মৃত্যুবরণ করার কথা ছিল আমার, কিন্তু শহীদ হলেন তিনি। এখন আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে অসহায়। আমার সংসারে উপার্জনের একমাত্র উৎস ছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও তিনি সব সময় সংগঠন, জামায়াত প্রোগ্রাম ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।” আল্লাহ যেন আমার স্বামীর শাহাদাত কবুল করেন। আমীন। – আছিয়া বেগম
শহীদ ফয়সলের গর্বিত মায়ের আঁকুতি
“আলহামদুলিল্লাহ। আমি আশা করি ইনশাআল্লাহ আমার এই সুশিক্ষিত বিনয়ী ভদ্র, শান্ত, অমায়িক ও সুন্দর আচরণবিশিষ্ট সন্তানকে আল্লাহ শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন। আমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় সন্তানকে আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আমি আল্লাহর কাছে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আল্লাহ আহকামুল হাকিমীন। অন্য ছেলেদের উদ্দেশে আমার অনুরোধ তারা যেন এই শহীদদের রক্তকে বৃথা যেতে না দেয়। তারাও যেন ইসলামী আন্দোলনকে উজ্জীবিত করার জন্য পিছ পা না হয়। আমার মুখে ভাষা নেই কলমে লেখা নেই- এখানেই ক্ষান্ত করছি।” – সাইয়েদা হাসনাবানু
শহীদ জাবিদ আলীর ছেলের প্রতিক্রিয়া
“২৯ অক্টোবর জামায়াতের মিটিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী মোটরসাইকেল আটক করে প্রথমে বড় ভাই আবু বকরকে বেনছা, কিরিচ, রামদা, হাতুড়ি, বল্লম এবং রড দিয়ে আঘাত করে নদীর সাইডে ফেলে দেয়। তারপর আব্বাকে আঘাত করে। আমি উঠে আব্বার গায়ের ওপর পড়ে তাদেরকে বলি আব্বাকে একেবারে মেরে ফেল না। আমার আব্বাকে পঙ্গু করে দিও না। তারপর আব্বাকে নিয়ে যায় আমাকে উলঙ্গ করে রেখে যায়। সংবাদ পেয়ে সবাই এসে দেখে আব্বার গায়ে পঁয়তাল্লিশ জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
শহীদ রফিকুল ইসলামের গর্বিত পিতার চাওয়া!
“আমার ছেলে রফিকুল আল্লাহর দরবারে শহীদ হিসেবে কবুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। কুড়িগ্রামবাসী সবাই তার জন্য কেঁদেছে। জীবনে সে কারো সাথে কোন প্রকার ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়নি। সে সব সময় সৎ সঙ্গে মিশত এবং দীনের পথে মানুষকে ডাকত। আমরা এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। শহীদের সাথীদের প্রতি আমার দাবি তারা যেন আমার রফিকুলের রেখে যাওয়া অবাস্তবায়িত কাজকে সম্পন্ন করে।” -শহীদের গর্বিত পিতা মোঃ আমির হোসেন
শহীদ রুহুল আমিনের ছেলের অনুভূতি
“আমি আমার পিতাকে হারিয়ে যেমন এতিম হয়েছি। আমার পরিবার যেমন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। আমি চাই আর কোন সন্তান যেন আমার মতো এতিম না হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও দেশের জনগণের কাছে আমার আব্বুর হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করছি। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আর আল্লাহ দ্বীনের পথে আমাদেরকে চলার তৌফিক দান করেন।” – মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ রাজু
শহীদ আব্বাস আলীর স্ত্রী
‘‘আমার হাজব্যান্ড, আমি এবং আমার বড় বোন জান্নাতুল ও বোনের হাজব্যান্ডসহ বাজার করার জন্য গিয়েছিলাম। আমার বোন ও আমি রিকশায় চড়ে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছিলাম এবং আমার হাজব্যান্ড ও আমার বোনের হাজব্যান্ড হেঁটে যাচ্ছিলেন। সে সময় আমার হাজব্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে তিনি মারা যান। আমার হাজব্যান্ড নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদের বিচার চাই। তারা কোন্ কারণে তাকে হত্যা করলো? আমার হাজব্যান্ড একজন জামায়াতের কর্মী ছিলেন।” – শহীদের গর্বিত স্ত্রী মোছা: সাদিয়া আফরিন
মাত্র তিন দিনের বীভৎসতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ভুলে যাওয়া দুঃস্বপ্নের কথা

শেখ হাসিনার ছড়িয়ে দেয়া হিংসার অগ্নিশিখায় আজ জ্বলছে বাংলাদেশ। মাত্র তিন দিনে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য আর লুটপাটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে দিয়েছে কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তারা। জাতি হিসেবে আমরাও ভুলে যেতে বসেছিলাম মুজিব-হাসিনার দীর্ঘ দুঃশাসনের কথা। যে দুঃস্বপ্ন আজও তাড়িয়ে বেড়ায় এ দেশের শত-সহস্র নির্যাতিত বনি আদমকে। যে দলটি মতার শুরুতেই ১৯৭২-৭৫ সালে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, লাল বাহিনী, নীল বাহিনী গঠন করে দেশকে নরককুণ্ডে পরিণত করেছিল, সেই দলটিকে জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেও শেখ হাসিনার মায়াকান্নায় আবেগাপ্লুত জনগণ তাদের সংশোধনের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা আবারো তার ভয়ঙ্কর চেহারায় ফিরে আসেন। তিনি সন্ত্রাসী গডফাদার শামীম ওসমান, আবু তাহের, আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ, জয়নাল হাজারী, ডা. ইকবাল, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, হাজী সেলিম, হাজী মকবুল, বোমা মানিক আর শত শত খুনি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে নারকীয় উল্লাসে, নতুন উদ্যমে, একুশ বছরের বুভুক্ষু রক্তলোলুপতা আর হিংস্র জিঘাংসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে। জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার কেন এই প্রতিহিংসা?
১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সিরাজ শিকদারসহ ৪০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী খুন করে রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে। আর ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মানুষ হত্যা করা হয় ২০ হাজার, নারী নির্যাতন ১৮,৭৮০; শিশু নির্যাতন ১,৭৯৩; ধর্ষণ ৬,৪১৪; ডাকাতি ৮,০০০; খুনের মামলা ১৫,০০০; সাংবাদিক খুন ৯; সাংবাদিক নির্যাতন ৪০০ ও অন্যান্য অপরাধ ৫,৬৯,৩৭১টি। (উৎস : মানব জমিন/যুগান্তর/ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা/ অধিকার)
তিনি মুকুটহীন সম্রাট জয়নাল হাজারীকে বাহবা দিয়েছিলেন সাংবাদিক টিপু সুলতানের পা ভেঙে দেয়ার জন্য, ডা. ইকবালকে পুরস্কৃত করেছিলেন শান্তি মিছিল থেকে এক নিমিষে গুলি করে প্রতিপক্ষের ৪টি লাশ ফেলে দেয়ার জন্য, আর লাঠি উঁচিয়ে বিচারকদের হুমকি দিয়েছেন যাতে তারা এ ব্যাপারে মাথা না ঘামায়। সেদিন পুরস্কৃত ডা. ইকবাল আবারও পিস্তলধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রকাশ্যেই গুলি করলেন জামায়াত-শিবির কর্মীদের। নেত্রীর এমন আনুগত্যের মাধ্যমেই নিজেদের নমিনেশন প্রাপ্তির যোগ্যতা প্রমাণ করছেন গডফাদার আর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।
লাশের নেশায় মাতাল এই নেত্রী মাঝে মাঝে সবার সম্মুখেই এমন ঘোষণা দিতেন। চট্টগ্রামে তিনি দলীয় সভায় বক্তৃতাকালে বলেন, ‘চট্টগ্রামের আওয়ামী নেতাকর্মীরা কি শাড়ি-চুড়ি পরেন? আর যদি একটি লাশ পড়ে তার বদলে দশটি লাশ ফেলতে হবে।’ ২৩ জুন ২০০১ পল্টন ময়দানে দলের আনন্দ উৎসবে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘আর সহ্য করবো না। ১৩ জুলাইয়ের পর দেখে নেব কত ধানে কত চাল।’
তাই গত ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং ফলশ্রুতিতে দেশব্যাপী তার দল যে তাণ্ডবলীলা সৃষ্টি করেছিল তা নতুন কিছু নয়, অতীতের ধারাবাহিকতা মাত্র। যে দুঃস্বপ্ন ভুলে যেতে বসেছিলাম আমরা।
তাই জানতে খুব ইচ্ছে কর

দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ

জাতির ক্রান্তিকালে যখন বাংলাদেশের কলঙ্ক আওয়ামী লীগ তার চিরাচরিত পশুবৃত্তিতে মেতে উঠেছে তখন এই পাশবিকতার জবাব দিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেশের স্বাধীনতার অতন্দ্রপ্রহরী চারদলীয় ঐক্যজোট। দেশ রক্ষার এই যুদ্ধে পিছিয়ে নেই ছাত্রসমাজও। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য দেশের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঢাকার মুক্তাঙ্গনে ঘোষণা করেছে নিজেদের সংহতি। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সকল প্রকার বর্বোরচিত হামলার জবাব দিতে আজ তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ছাত্রঐক্যের সমাবেশে সেই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বারবার।
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়

আর কতকাল দেশবাসী রাজনীতির অসহায় শিকারে পরিণত হবে? এই প্রশ্ন আজ দেশের সর্বত্র। যারা শুধু ক্ষমতা দখল করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে, জনগণের কথা না ভেবে একের পর এক ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জোর করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখে। আর সেই স্বপ্ন পূরণের কথা ভেবে জামায়াত ও শিবিরসহ দেশের শান্তিকামী মানুষের রক্ত মেখে উল্লাস করে। লাশের পর লাশ ফেলে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি বানায়। তাদের কাছ থেকে কি দেশের মানুষ শান্তি আশা করতে পারে? যে নেত্রীর একটি ঘোষণায় শত লাশ আর সহস্র মানুষের স্বজন হারানোর কান্না ভেসে আসে, যিনি নিজেই মানুষ হত্যার ঘোষণা দেন তার কাছে দেশের মানুষ কিংবা দেশ কি নিরাপদ?
প্রিয় দেশবাসী! তাই এ দেশের জনগণকে আজ সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে, প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। আমরা চাই না ৫ বছরের আরেকটি দুঃস্বপ্ন, চাই না বাংলাদেশের শিশু গণতন্ত্রের অকাল মৃত্যু, জয়নাল হাজারী আর শামীম ওসমানরা আবার হত্যাযজ্ঞ শুরু করুক তাও আমরা চাই না। তাই এদেরকে রুখে দিতে হবে- সন্ত্রাস নয় বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে। সুতরাং জাতির বিবেকবান নাগরিক যারা হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে- তারা আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটকে ‘না’ বলুন।

মূল লেখাঃ ২৮শে অক্টোবর ২০১০, রাত ১২:১৯

SHARE